শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১২

নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশের জন্য করণীয়


আব্দুলাহ ইবনে সালাম(রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী(সাঃ) বলেছেন, “হে লোক সকল! তোমরা ব্যাপকভাবে সালাম প্রচার কর, (ক্ষুধার্তকে) অন্ন দাও এবং লোকে যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকবে তখন সালাত আদায় করো। তাহলে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [তিরমিযী ২৪৮৫; ইবনু মাজাহ ১৩৩৪, ৩২৫১; দারেমী ১৪৬০]

বুধবার, ৭ নভেম্বর, ২০১২

পরিপূর্ণ ঈমানদার কে ?

“মুমিনদের মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানদার হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।” [আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযি ]

সুতরাং উত্তম চরিত্র হচ্ছে ঈমানের প্রমাণবাহী ও প্রতিফলন। চরিত্র ব্যতীত ঈমান প্রতিফলিত হয় না বরং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন যে, তাঁকে প্রেরণের অন্যতম মহান উদ্দেশ্য হচ্ছে চরিত্রের উত্তম দিকসমূহ পরিপূর্ণ করে দেয়া।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, “আমি তো কেবল চরিত্রের উত্তম দিকসমূহ পরিপূর্ণ করে দিতে প্রেরিত হয়েছি।” ইমাম আহমাদ ও ইমাম বুখারী আদাবুল মুফরাদে বর্ণনা করেছেন। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা উত্তম ও সুন্দরতম চরিত্রের মাধ্যমে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রশংসা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, “নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।” [সূরা আল কালাম : ৪]

গুনাহ মাফ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে এক শতবার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি (আমি প্রশংসার সাথে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি)’ পড়ে, তার গুনাহসমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির সমান হলেও মাফ করে দেয়া হয়।

{সহীহ আল-বুখারী, ৮ম খন্ড, ৭৫ অধ্যায়, হাদীস নং-৪১৪}

বুধবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১২

কুরবানীর মাসায়েল


কুরবানীর শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ:
কুরবানী শব্দটি আরবী قربان কুরবান হতে উৎপন্ন। যার অর্থ হল, নিকটবর্তী হওয়া বা নৈকট্য লাভ করা। আর শরীয়তের পরিভাষায় কুরবানী বলতে যে পশু  ঈদের দিন জবেহ করা হয় তাকেই বুঝানো হয়।
এটাকে আবরীতে أضحية  উযহিয়াও বলা হয়। এই  أضحية আরবী শব্দটিকে চার ভাবে পড়া যায়।
(১) أضحية (উযহিয়্যাহ)
(২) إضحية (ইযহিয়্যাহ) এ দুটি শব্দের বহুবচন আসে أضاحي)
(৩)  ضحية(যহিয়্যাহ্) বহুবচনেঃ ضحايا যাহায়া
(৪) أضحاه (আযহাহুন) বহু বচনেঃ  أضحى  এ থেকে কুরবানীর দিন কে আরবী ভাষায় يوم الأضحي (ইয়ামুল আযহা) বলা হয়। (লেসানুল আরাবের বরাতে ফিকহুল উযহিয়্যাহ ৭ পৃঃ)
ইমাম ছানআনী বলেন:
কুরবানীকে আরবী পরিভাষা বলা হয়,  أضاحي আযাহী যা   أضحيةশব্দের বহুবচন। আর এই শব্দটির হামযায় যের দিয়েও পড়া যায় আবার হামযা বাদ দিয়ে ض এ যবর দিয়ে  (ضحية)ও পড়া যায়। (এর শাব্দিক অর্থ অপরাহ্ন) ইহা যেন সে সময়ের নাম থেকেই নেয়া হয়েছে যে সময় উক্ত কুরবানীর পশুকে যবেহ করা বিধেয়। (আর তা হল, অপরা‎হ্নে) (সুবুলু সালামের (৪/১৬০) এর বরাতে ফিকহুল উযহিয়্যাহ্ঃ ৭)
কুরবানীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
কুরবানীর বিধানটি অতীব প্রাচীন বিধান। আল্লাহ বলেন:
﴿وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا﴾
 “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানীর ব্যবস্থা করেছি।” ( সূরা হাজ্জঃ ৩৪)
আদম (আঃ) এর দুই পুত্র হাবীল ও কাবীলের দেয়া কুরবানী থেকেই কুরবানীর ইতিহাসের গোড়া পত্তন হয়েছে। আল্লাহ বলেন:
﴿وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آَدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ  مِنَ الْآَخَرِ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ   لَئِنْ بَسَطْتَ إِلَيَّ يَدَكَ لِتَقْتُلَنِي مَا أَنَا بِبَاسِطٍ يَدِيَ إِلَيْكَ لِأَقْتُلَكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ  إِنِّي أُرِيدُ أَنْ تَبُوءَ بِإِثْمِي وَإِثْمِكَ فَتَكُونَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ﴾
 “(হে রাসূল!) আপনি তাদেরকে সঠিক ভাবে পড়ে শুনিয়ে দিন আদমের পুত্রদ্বয়ের সংবাদ। যখন তারা কুরবানী দিল কিন্তু তাদের একজনেরটা গৃহীত হল অপরেরটা গৃহীত হল না। তখন (যার কুরবানী গৃহীত হলনা সে যার কুরবান গৃহীত হল তাকে লক্ষ্য করে) বলল, আমি তোমাকে হত্যা করব। (উত্তরে) সে বলল, আল্লাহ তো শুধু পরহেজগারদের থেকেই (কুরবানী) কবুল করেন। আমাকে হত্যা করার জন্য তুমি হাত প্রসারিত করলেও আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য আপন হাত প্রসার করবনা। আমি চাই তুমি আমার গুনাহ এবং তোমার গুনাহ বহন করে জাহান্নামীদের দলভুক্ত হও”। (সূরা মায়েদাহঃ ২৭ ও ২)
তবে আমাদের উপর যেভাবে কুরবানী বিধান রয়েছে তা ইবরাহীম (আঃ) এর কুরবানী থেকে এসেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
﴿وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ﴾
 “আমি তাঁর (ইসমাইল) পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু।” (সূরা সাফফাতঃ ১০৭)
কুরবানী শরীয়ত সম্মত হওয়ার দলীল:
ইবনু কুদামা (রহঃ) আল মুগনী গ্রন্থে (৯/৩৪) বলেন: “ইসলামী শরীয়তে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার মাধ্যমে কুরবানীর বিধান সাব্যস্ত হয়েছে।”
কুরআন থেকে দলীল: আল্লাহ তায়ালার বাণী:
﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ﴾
 “অতএব আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।” (সূরা কাওসারঃ ২) কোন কোন তাফসীর কারকের মতে এ আয়াত দ্বারা ঈদের নামাযের পর কুরবানী করা উদ্দেশ্য। (ফিককহুল উযহিয়্যাহ) অনুরূপভাবে কুরবানীর সপক্ষে নিন্মোক্ত আয়াতটি বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
﴿وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآَخِرِينَ﴾
 “আমি এটা (তাঁর আদর্শ) পরবর্তীদের মধ্যে রেখেছি।” (আছ ছাফ্ফাতঃ ১০৮) অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা পশু কুরবানীর বিধানটি ইবরাহীম (আঃ) এর পরবর্তী মানুষের জন্য রেখে দিয়েছেন।
সুন্নাহ (হাদীছ) থেকে দলীল:
 আনাস (রা:) বর্ণনা করেন:
ضحى النبي صلى الله عليه وسلم بكبشين أملحين أقرنين ذبحهما بيده وسمى وكبر ووضع رجله على صفاحها (متفق عليه)
 “নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাদা-কালো রং মিশ্রিত দুটি শিং ওয়ালা ভেড়া কুরবানী কিরে ছিলেন। নিজ হাতে উভয়টিকে যবেহ করে ছিলেন এবং যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম এবং তাকবীর বলেছিলেন তথা বিসমিল্লাহে আল্লাহু আকবার বলে যবেহ করেছিলেন। এবং (যবেহ করার সময়)  তিনি ঐ পশুদ্বয়ের কাঁধে পা রেখেছিলেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
ইজমাঃ কুরবানী শরীয়ত সম্মত হওয়ার ক্ষেত্রে মুসলিমগণ সকলে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
কুরবানীর গুরুত্ব ফযীলত এবং তৎ সংক্রান্ত বর্ণিত হাদীছগুলির অবস্থা:
নিঃসন্দেহে কুরবানী একটি ইবাদত এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন কারা যায়। এবং তাতে ইবরাহীম (আঃ) এর সুন্নাত আদায় করা হয়। সেই সাথে আমাদের প্রিয় নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এর সুন্নতও  প্রতিপালিত হয়। কারণ, এ কুরবানী স্বয়ং নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  দিয়েছেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেন:  من كان به سعة ولم يضح فلا يقربن مصلانا  অর্থ: “কুরবানী দেয়ার সমর্থ থাকার পরও যে ব্যক্তি কুরবানী দেয় না সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটে না আসে।” (আহমাদ, ইবনু মাজাহ্)
তবে এটিকে অনেক মুহাদ্দিস মাওকুফ বা সাহাবীর উক্তি বলেছেন, অবশ্য  মুহাদ্দিস আলবানী হাদীছটিকে মারফু তথা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বানী হিসাবে হাসান বলেছেন। (দ্রঃ ছহীহ ইবনু মাজাহ) হাফেজ ইবনু হাজার হাদীছটি সম্পর্কে বলেন, “কুরবানী করার ফযীলতে অনেকগুলি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর একটিও বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হয়নি। বরং তার সবগুলোই যঈফ (দুর্বল) অথবা মউযূ (জাল)। মালিকী মাযহাবের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম ইবনুল আরাবী (রহঃ) বলেন:
ليس في فضل الأضحية حديث صحيح وقد روى الناس فيها عجائب لم تصح منها((إنها مطاياكم إلى الجنة)) (عارضة الأحوذي شرح جامع الترمذي ৬/২৮৮)
“কুরবানীর ফযীলতে একটিও ছহীহ হাদীছ নেই। তবে মানুষ এ সম্পর্কে অনেক আজগুবী হাদীছ বর্ণনা করেছে যা মোটেও ছহীহ নয়। সে সব  আজগুবী হাদীসের মধ্যে অন্যতম হল এই কথাটি:
(( إنها مطاياكم   إلى الجنة))
 “উহা তোমাদের জান্নাতে যাওয়ার বাহন স্বরূপ”। (দ্রঃ তিরমিযীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ আরেযাতুল আহওয়াযী ৬/২৮৮)
নিম্নে কুরবানীর ফযীলত সংক্রান্ত হাদীছগুলি পর্যালোচনা সহ পরিবেশিত হল:
 ১নং হাদীছঃ
عن عائشة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ماعمل ابن آدم يوم النحر عملا أحب إلى الله عز وجل من هراقة دم، وإنه يأتي يوم القيامة بقرونها وأظلافها وأشعارها وإن الدم ليقع من الله بمكان قبل أن يقع على الأرض فطيبوا بها نفسا (أخرجه ابن ماجة برقم ৩১২৬ والترمذي برقم ১৪৯৩ والحاكم (৪/ ২২১-২২২  وانظر فقه الأضحية)
 “আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত, নবী বলেন, “কুরবানীর দিনে কোন আদম সন্তান কুরবানীর পশুর খুন ঝরানোর চেয়ে মহান আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় আমল করেনা। সে কিয়ামত দিবসে উক্ত পশুর শিং, খুর, লোম প্রভৃতি নিয়ে উপস্থিত হবে। এবং তার খুন জমিনে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর নির্ধারিত মর্যাদার স্থানে পতিত হয়। অতএব, তোমরা প্রফুল্ল চিত্তে কুরবানীকর।” (ইবনু মাজাহ, হা/৩১২৬, তিরমিযী, হা/১৪৯৩, হাকেম৪ /২২১-২২২ দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়্যাহঃ)
মন্তব্য: হাদীছটি যঈফ। কারণ, হাদীছটির সনদে কয়েকটি দোষ আছে:
১)         উক্ত হাদীছের সনদে আব্দুল্লাহ বিন নাফে নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। তার স্মৃতি শক্তিতে দুর্বলতা ছিল।
২)         হাদীসটির সনদে আবুল মুসান্না নামক আরেকজন রাবী রয়েছে তার আসল নাম হল সুলাইমান বিন ইয়াজিদ। তিনি অত্যন্ত দুর্বল ও বাজে। (দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়্যা)
৩)         উক্ত হাদীছের প্রায় অনুরূপ হাদীছ ইমাম আব্দুর বাযযাক তার মুছান্নাফ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। (হা/৮১৬৭) উক্ত হাদীসটির সনদেও আবু সাঈদ শামী নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছে তিনি একজন ‘পরিত্যক্ত’ রাবী। (দ্রঃ প্রাগুক্ত)
২নং হাদীছঃ
 عن زيد بن أرقم قال قال أصحاب رسول الله: يارسول الله ماهذه الأضاحي؟ قال:))سنة أبيكم إبراهيم(( قالوا: فما لنا فيها؟ قال:))بكل شعرة حسنة((، قالوا: فالصوف يارسول الله؟! قال ))بكل شعرة من الصوف حسنة((
 “যায়েদবিন আরকাম (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! এই কুরবানীর পশুগুলির তাৎপর্য কি? (কেন আমরা এগুলো যবেহ করে থাকি?) তিনি বললেন: “ইহা তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ)  এর সুন্নত।” তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন, এতে আমাদের কী সওয়াব রয়েছে? তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী রয়েছে।” তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন, পশমের মধ্যে যে ছোট ছোট লোম রয়েছে ওগুলোরও কি বিনিময় তাই? নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “ছোট ছোট প্রতিটি লোমের বিনিময়ে একটি করে নেকী রয়েছে।” (ইবনু মাজাহ্, হা/৩১২৭, আহমাদ (৪/৩৬৮), ইবনু হিব্বান ফিল মাজরুহীন (৩/৫৫))
মন্তব্য: হাদীছটি যঈফ। কারণ, এ হাদীসটির সনদে আবু দাউদ আল আম্মী নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। তার প্রকৃত নাম হল, নুফাই ইবনুল হারিস। সে মুহাদ্দিসগণের নিকট ‘পরিত্যক্ত’ রাবী। এতে আরও একজন রাবী রয়েছে তার নাম হল  আয়েযুল্লাহ, সে ‘যঈফ’ রাবী।
৩নং হাদীছঃ
 عن أبي سعيد الخدري قال قال رسوالله صلى الله عليه وسلم لفاطمة عليها الصلاة والسلام!)) قومي إلى أضحيتك فاشهديها فإن لك بأول قطرة تقطر من دمها يغفر لك ماسلف من ذنوب((، قالت: يارسول الله! هذا لنا أهل البيت خاصة أو لنا وللمسلمين عامة؟  قال:))لنا وللمسلمين عامة(( ( رواه الحاكم ৪/২২২ والبزار ২/ ৫৯ مع كشف الأستار )
আবু সাঈদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  ফাতেমা (রা:) কে বললেন, “(হে ফাতেমা!) তুমি তোমার কুরবানীর পশুর নিকট (যবেহ কালীন) দাঁড়াও এবং উপস্থিত থাক, কারণ তার প্রথম ফোটা খুন (জমিনে) পড়ার সাথে সাথে তোমার অতীতের গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হবে।” ফাতেমা (রা:) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি আমরা আহলুল বায়ত তথা নবী পরিবারের জন্যই খাস নাকি তা আমাদের জন্য এবং সাধারণভাবে সকল মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য? তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আমাদের জন্য এবং সাধারণভাবে সকল মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য।” (হাকেম ৪/২২২) বাযযার ২/৫৯ কাশফুল আসতার)
মন্তব্য: হাদীছটি যঈফ। কারণ, এর সনদে আব্দুল হামীদ  নামে একজন রাবী রয়েছে যে যঈফ। আরেকটি কারণ হল, এর সনদে আতিয়া আল আওফী নামে আরেকজন রাবী রয়েছে সেও যঈফ এবং মুদাল্লিস। আবু হাতিম তার ইলাল (علل) গ্রন্থে (হা/৩৮) বলেন, “এটি একটি ‘মুনকার’ হাদীছ।” (দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়্যাহঃ ১০(
৪নং হাদীছঃ
عن علي رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لفاطمة:  يا فاطمة فاشهدي أضحيتك أما إن لك بأول قطرة من دمها مغفرة لكل ذنب أما إنه يجاء بها يوم القيامة بلحومها ودمائها سبعين ضعفا حتى توضع في ميزانك
আলী (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: “হে ফাতেমা! তুমি তোমার কুরবানীর পশুর নিকট জবেহ করার  সময় উপস্থিত থাকিও। জেনে রেখ, ঐ পশুর রক্তের প্রথম ফোটা (মাটিতে) পড়ার সাথে সাথে তোমার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। জেনে রেখ! কিয়ামত দিবসে কুরবানীর ঐ পশুগুলিকে রক্ত, মাংস সহ সত্তরগুণ বৃদ্ধি করে নিয়ে আসা হবে এবং তোমার দাঁড়িপাল্লায় তা রাখা হবে।” (বাইহাকী (৯/২৮৩) আবদুবনু হুমাইদ (৭/৮)
মন্তব্য: এ হাদীছের সনদে আমর বিন খালিদ ওয়াসেতী রয়েছে সে একজন ‘পরিত্যক্ত’ রাবী। অনুরূপ হাদীছ ইমাম আব্দুর রাযযাক যুহরী হতে ‘মুরসাল’ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসটির সনদে আব্দুল্লাহ বিন মুহাররার নামক একজন রাবী রয়েছে, তিনিও অত্যন্ত যঈফ। অনুরূপ হাদীছ ইমরান বিন হুসাইন হতে বায়হাকী (৯/২৮৩), হাকিম (৪/২২২) এবং তাবারানী (১৮/২৩৯) প্রমুখগণ তাদের স্ব স্ব কিতাবে বর্ণনা করেছেন)। উক্ত হাদিছটিকে ইমাম তায়ালিসী (মুসনাদ তায়ালিসী, হা/২৫৩০) ও ইবনু আদী (৭/২৪৯২) বর্ণনা করেছেন। তবে তার সনদেও দুজন যঈফ রাবী রয়েছে তারা হলেন, নাযর বিন ইসমাইল এবং আবু হামযাহ্ শেমালী। (দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়্যাহ্)
৫নং হাদীছঃ
عن على عن النبي صلى الله عليه وسلم : ))ياأيها الناس  ضحوا واحتسبوا بدمائها وإن الدم وإن وقع في الأرض  فإنه يقع في حرز الله عزو جل(( رواه الطيالسي برقم ৮৩১৫ ،والطبراني في الأوسط  وفيه موسى بن زكريا وعمرو بن الحصين العقيلي وهما متروكان ، انظر: فقه الأضحية ومجمع الزوائد ৪/১৭)
 আলী (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, (তিনি বলেন) “হে মানব মণ্ডলী! তোমরা কুরবানী কর এবং তার খুনকে সওয়াব লাভের মাধ্যম মনে কর। নিশ্চয়ই কুরবানীর পশুর খুন জমিনে পতিত হলে তা আল্লাহর হেফাজতে চলে যায়।” [আবু দাউদ তায়ালেসী (হা ৮৩১৫)।]
মন্তব্য: হাদীসটির সনদে মুসা বিন যাকারিযা এবং আমর ইবনুল হুসাইন রয়েছে। তারা উভয়ে ‘পরিত্যক্ত’ রাবী।
৬ নং হাদীছ:
عن عبد الله ابن عباس رضى الله عنهما قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:  ماأنفقت الورق في شيئ أحب إلى الله من نحر ينحر يوم عيد (رواه الطبراني(১১/১৭)  والدارقطني )৪/২৮২( والشجري في الأمالي )২/৭৯-৮০( وفي إسناده إبراهيم بن يزيد الخوزي وهو متروك ، انظر: فقه الأضحي)
অর্থ: “আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেছেন: “চাঁদি (টাকা-পয়সা) যেসব ক্ষেত্রে খরচ করা হয় তার মধ্যে আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয় হল কুরবানী যা ঈদের দিনে  যবেহ করা (তাবারানী ১১/১৭) দারাকুতনী ৪/২৮২ প্রভৃতি।
হাদীসটির সনদে ইবরাহীম বিন ইয়াজিদ আল খোযী নামক একজন পরিত্যক্ত রাবী রয়েছে।
৭নং হাদীছ:
عن الحسين بن علي قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ((من ضحى طيبة بها نفسه محتسبا لأضحيته كانت له حجابا من النار ( رواه الطبراني ৩/ ৮৪، وفي إسناده : أبو داود النخعي (سليمان بن عمرو وهو كذاب
 অর্থ: হুসাইন ইবনু আলী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যে ব্যক্তি কুরবানীর পশুকে খুশী মনে ও নেকীর আশায় যবেহ করবে তার এই কুরবানীর পশু জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পর্দা বা অন্তরায় হয়ে যাবে।”
মন্তব্য: এটি একটি মওযূ বা জাল হাদীস। এর সনদে আবু দাউদ নাখঈ (যার প্রকৃত নাম সুলাইমান বিন আমর) নামক একজন মহা মিথ্যুক রাবী রয়েছে।
৮নং হাদীছঃ
عن عبدالله بن عباس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: (( في يوم أضحى ))ماعمل ابن آدم في هذا اليوم أفضل من دم يهراق في سبيل الله إلا أن يكون رحما مقطوعة توصل(( (رواه الطبراني ১১)/  وفي إسناده الحسن بن يحى الخشني وهو صدوق كثير الغلط وفيه ليث ابن أبي  سليم وإسماعيل بن عياش وكلاهما ضعيف، انظر: فقه الأضحية
অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  কুরবানীর দিন বললেন, “কোন অদম সন্তান এই দিনে (কুরবানীর) খুন প্রবাহিত করার চেয়ে অধিক সৎ আমল করে না। তবে ছিন্ন আত্মীয়তা সম্পর্ককে আবার অবিচ্ছিন্ন করার কথা ভিন্ন। (তাবারানী ১১/৩২)
মন্তব্য: হাদীছটি যঈফ। এর সনদে হাসান বিন ইয়াহয়া আল খোশানী নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। তিনি সত্যবাদী তবে প্রচুর ভুল করতেন। আরেকজন বর্ণনাকারী রয়েছে তার নাম লাইস বিন আবী সুলাইম তিনিও একজন যঈফ রাবী। এতে ইসমাইল বিন আয়্যাশ নামক অপর এক জন  রাবী রয়েছে। তিনি যখন তিনি শামবাসী  ছাড়া অন্য এলাকার মুহাদ্দিস গনের নিকট থেকে হাদীস বর্ণনা করবেন তখন তার হাদীস যঈফ বলে বিবেচিত হবে। আর এখানে তিনি শামবাসী ছাড়া অন্যদের থেকে হাদীসটি বর্ণনা করায় তা যঈফের অন্তর্ভুক্ত।
অনুরূপ হাদীছ ইবনু আব্দুল বার তার ইস্তেযকার (৫/১৬৪) ও তামহীদ (২৩/১৯২) গ্রন্থে ইবনু আব্বাসের সূত্রে বর্ণনা করে সেটাকে ‘গারীব’ হাদীছ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এটির সনদে সাঈদ বিন যায়দ নামক যঈফ বারী রয়েছে। তিনি ইমাম মালিক (রহঃ) হতে মুনকার বা অগ্রহণীয় অনেক কিছু বর্ণনা করতেন। (দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়্যাহঃ ১১)
৯ নং হাদীছঃ
عن أبي هريرة عن النبي  قال: استفرهوا ضحاياكم فإنها مطاياكم على الصراط – رواه الديلمي في مسند الفردوس )১/৮৫( وهوحديث ضعيف جدا ، انظر : فقه الأضحية )
অর্থ: আবু হুরাইরা (রা:) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “তোমরা তোমাদের কুরবানীর পশুগুলো শক্তিশালী ও মোটা-তাজা দেখে নির্বাচন কর। কারণ এগুলো তোমাদের পুলসিরাতের উপর চড়ে যাওয়ার বাহন হবে।” (দাইলামী-মুসনাদুল ফিরদাউস ১/৮৫)
মন্তব্য: হাদীছটি অত্যন্ত যঈফ। হাফেয ইবনু হাজার তালখীছুল হাবীর গ্রন্থে (৪/১৩৮) বলেন: “হাদীছটি মুসনাদুল ফিরদাউস গ্রন্থের গ্রন্থকার ইবনুল মুবারক এর সূত্রে ইয়াহয়্যা বিন ওবায়দুল্লাহ্ বিন মাওহাব বর্ণনা করেছেন তার পিতা থেকে। তিনি আবু হোরায়রা হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন …..। তবে সনদে বর্ণিত ইয়াহয়্যা অত্যন্ত যঈফ। হাদীছটি ইমাম আলবানীও যঈফ বলেছেন। (দ্রঃ যঈফুল জামে হা/৯২৪)
১০ নং হাদীছঃ
عن عبد الله بن عمرو بن العاص أن النبي  قال:)) أمرت بيوم الأضحى عيدا جعله الله لهذه الأمة(( قال الرجل: أرأيت إن لم أجد إلا منيحة أنثى أفأضحي بها؟ قال:))لا، ولكن تأخذ من شعرك وأظفارك وتقص شاربك وتحلق عانتك فتلك تمام أضحيتك عندالله(( ( أخرجه أبو داود برقم ২৭৮৮ وهو حديث ضعيف )
অর্থ: আমর ইবনুল ’আস হতে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেছেন: “আমি কুরবানীর দিনকে ঈদ হিসাবে গ্রহণ করার নির্দেশ প্রাপ্ত হয়েছি যা আল্লাহ এই উম্মতের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এক ব্যক্তি বলল: আপনার কি মত এ ব্যাপারে-আমি যদি একমাত্র দান কৃত দুধাল বকরি ছাড়া আর কিছু না পাই তবে কি আমি ওটা জবাই (কুরবানী) করব? নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বললেন: “না (তা করবে না) বরং তুমি তোমার চুল, নখ, গোঁফ ও নাভির নিম্নদেশের লোম কাটবে। ইহাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণা ঙ্গ কুরবানী বলে গণ্য হবে।” (আবু দাউদ, কুরবানীর অধ্যায়, হা/২৭৮৮, নাসায়ী হাকেম (বৈরুত) ৪/২২৩ সনদ যঈফ। (দ্রঃ যঈফ আবু দাউদ হা/৫৯৫, যঈফ নাসায়ী হা/২৯৪।। হাদীছটিকে ইমাম হাকেমও উক্ত যঈফ সনদে বর্ণনা করেছেন।)
১১ নং হাদীছঃ
عن عائشة رضى الله عنها أيها الناس ضحوا وطيبوا بها أنفسا فإني سمعت رسول الله صلى الله  عليه وسلم  يقول:  ))مامن  عبد توجه بأضحيته ألى القبلة إلا كان دمها وقرنها وصوفها حسنات محضرات في ميزانه يوم القيامة، فإن الدم إن وقع في التراب فإنما يقع في حرز الله حتى يوفيه صاحبه يوم القيامة(( (ذكره أبو عمر بن عبد البر في كتاب التمهيد ، انظر: تفسير القرطبي )
অর্থ: আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “হে লোক সকল! আপনারা কুরবানী করুন এবং তা খুশী মনে করুন। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, যদি কোন ব্যক্তি তার কুরবানীর পশু সহ কিবলা মুখী হয় (এবং যবেহ করে) তাহলে তার রক্ত, শিং এবং লোম নেকীতে পরিণত করে কিয়ামত দিবসে তার দাঁড়িপাল্লায় উপস্থিত করা হবে। কুরবানীর পশুর খুন যদিও তা মাটিতে পড়ে কিন্তু তা প্রকৃত অর্থে আল্লাহর হিফাজতে পড়ে। তিনিই এর প্রতিদান তাকে কিয়ামত দিবসে প্রদান করবেন। (কিতাবুত তামহীদ এর বরাতে তাফসীরুল কুরতুবী)
 উক্ত হাদীছটির সনদও যঈফ।
১২নং হাদীছঃ
عن ابن عباس رضى الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ))مامن نفقة بعد صلة الرحم أفضل عندالله من إهراق الدم(( (قال أبو عمر ابن عبد البر: وهو حديث غريب من حديث مالك، انظر: تفسير القرطبي)
ইবনু আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এরশাদ করেছেন: “আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টি ছাড়া এমন কোন খরচ নেই যা আল্লাহর নিকট কুরবানীর পশুর খুন ঝরানোর চেয়ে উত্তম হতে পারে।” (তাফসীরুল কুরতুবী)।
আবু ওমার ইবনে আব্দুল বার বলেন: “এ হাদীসটি ইমাম মালেকের সূত্রে বর্ণিত একটি ‘গারীব’ হাদীছ” (দ্র: প্রাগুক্ত)।
 কুরবানীর ফযীলতে খাছ কোন ছহীহ বা হাসান হাদীছ না থাকলেও নিম্ন বর্ণিত হাদীছ দ্বারা পরোক্ষভাবে তার কিছু ফযীলত প্রমাণিত হয়। হাদীছটি হল:
عن ابن عباس رضى الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ((ما من أيام العمل  الصالح فيها أحب إلى الله عز وجل من هذه الأيام يعني أيام العشر قالوا: ياررسول الله ولا الجهاد في سبيل الله ؟ قال: ولا الجهاد في سبيل الله إلا رجلا خرج بنفسه وماله ثم لم يرجع من ذلك بشيئ (رواه البخاري )
ইবনু আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুলাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এরশাদ করেন “যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের নেক আমলের চেয়ে  আল্লাহর কাছে অধিকতর প্রিয় কোন আমল নেই।” ছাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও কি নয়? রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বললেন: “জিহাদও নয়। তবে ঔ ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান ও মাল নিয়ে (জিহাদে) বেরিয়েছে এবং আর সে কিছুই নিয়ে ফিরে আসেনি (বুখারী)
 অন্য হাদীছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেন: “আরাফার দিনের ছিয়াম পালন করলে (যারা হজ্জব্রত পালনকারী নয় তাদের জন্য) পূর্ববতী এবং পরবর্তী একবছরের গুনাহর কাফফারা হয়ে যায়।” (ছহীহ মুসলিম)
যেহেতু কুরবানী করা ১০ যিলহাজ্জের অন্যতম একটি করণীয় কাজেই সাধারণভাবে কুরবানীরও ফযীলত এ হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয়।
কুরবানী  করার বিধান:
কুরবানী করা ওয়াজিব না সুন্নাত এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের মাঝে বিতর্ক রয়েছে। যেমনঃ
-           ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর নিকট ধনী শ্রেণীর উপর কুরবানী দেয়া ওয়াজিব। তার নিকট ধনী বলতে তাকে বুঝায় যে যাকাতের নেছাবের মালিক।
-           জমহুর তথা অধিকাংশ বিদ্বানের মতে কুরবানী দেয়া সুন্নাত বা মুস্তাহাব। আবু বকর (রা:), উমর (রা:), আবু সাঈদ (রা:), আবু মাসউদ বাদারী (রা:), বিলাল (রা:) প্রমুখ ছাহাবীগণ এই মতই প্রকাশ করতেন। (তাফসীর কুরতুব)
দলীল:
عن أم سلمة أن النبي قال: إذا دخلت العشر وأراد أحدكم أن يضحي فلا يمس من شعره وبشره شيئا
উম্মে সালামা (রা:) হতে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যিলহজ্জের (প্রথম) দশক প্রবেশ করলে তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী দিতে ইচ্ছুক সে যেন তার চুল এবং (শরীরের) চর্ম হতে কিছুই স্পর্শ না করে (অর্থাৎ না কাটে)”। ( ছহীহ মুসলিম)
ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন: উক্ত হাদীছের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কুরবানী দেয়া ওয়াজিব নয়। কারণ রসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “তোমাদের কেউ যদি কুরবানী করতে ইচ্ছা করে তাহলে সে যেন ……. না করে।” যদি কুরবানী করা ওয়াজিব হত তাহলে এভাবে বলা হত: তাহলে সে যেন কুরবানী না দেয়া পর্যন্ত নিজের চুল প্রভৃতি স্পর্শ না করে।” (বায়হাকী ফিস সুনান (৭/২৬৩) ফিকহুল উযহিয়াহ্ ১২-১৩)
-           ইমাম তিরমিযি বলেন: (৪/৯২)
العمل على هذا من أهل العلم أن الأضحية ليست واجبة ولكنها سنة من سنن النبي صلى الله عليه وسلم يستحب أن يعمل بها وهو قول سفيان الثوري وابن المبارك
 “এর উপরই আহলে ইলমদের আমল রয়েছে যে, কুরবানী দেয়া ওয়াজিব নয়। তবে উহা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্যতম সুন্নাত যার উপর আমল করা মুস্তাহাব। ইহা সুফিয়ান সাওরী ও আব্দুল্লাহ বিনুল মুবারক প্রমুখদের কথা অভিমত।” (সুনান তিরমিযী ৪/৯২)
সালাফে ছালেহীনের অধিকাংশের এটাই অভিমত যে কুরবানী দেয়া ওয়াজিব নয় বরং সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।
হাজীদের কুরবানী প্রসঙ্গ:
হাজীগণ হজ্জের মাঠে যে পশু কুরবানী দেয় তাকে আরবীতে ‘হাদি’ বলা হয়; কুরবানী বলা হয় না। যারা তামাত্তু ও ক্বেরান হজ্জ করেন তাদের উপর এ ‘হাদি’ যবেহ করা ওয়াজিব। অবশ্য হাজিগণ আলাদা ভাবে কুরবানীও করতে পারে। তবে এটা তাদের উপর ওয়াজিব নয়। (দ্রঃ আল মুগণী ফি ফিক্বহিল হাজ্জে ওয়াল উমরাহ)
নিম্নে সালাফে ছালেহীনের কুরবানী সম্পর্কে কতিপয় বক্তব্য ও কর্মনীতি পরিবেশিত হল যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে কুরবানী দেয়া ওয়াজিব নয় বরং সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।
১মঃ
  – عن الشعبي عن أبي سريحة قال: ((لقد رأيت أبا بكر وعمر رضى الله عنهما وما يضحيان عن أهلهما خشية أن يستن بهما…))(( أخرجه عبد الرزاق في مصنفه بإسناد صحيح -مصنف عبدالرزاق برقم ৮১৩৯ انظر: فقه الأضحية
ইমাম শাবী সুরাইহা হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “আমি আবু বকর ও ওমার (রা:) কে দেখেছি তাঁরা তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী দিতেন না এই আশংকায় যে, মানুষ তাদের এ কাজকে সুন্নত বানিযে নিবে। …”  (মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৮১৩৯ সনদ ছহীহ। দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়্যাহঃ ১৫)
২য়ঃ
  عن أبي وائل قال: قال أبو مسعود الأنصاري: إني لأدع الأضحى وإني لموسر مخافة أن يرى جيراني أنه حتم على (رواه عبدالرزاق برقم ৮১৪১ وإسناده صحيح، انظر: فقه الأضحية
আবু ওয়াইল হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু মাসউদ আনসারী বলেন: “আমি সচ্ছল হওয়ার পরেও কুরবানী করা পরিত্যাগ করি এজন্য যে, যাতে আমার প্রতিবেশীরা মনে না করে যে তা আমার উপর ওয়াজিব।” [মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক (৮১৪৯)]
অলোচ্য হাদীছের আ’মাশ ‘মুদাল্লেস’ হলেও যেহেতু মানসূর তার ‘মুতাবাআত’ করেছে তাই ওটা আর ধর্তব্য নয়। (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাকঃ ৮১৪৮)
৩য়ঃ ইবনু ওমার (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি কুরবানী সম্পর্কে বলেন: هى سنة ومعروف  অর্থ: “উহা সুন্নাত ও সোওয়াবের কাজ।” (তালীকে বুখারী, ফাতহুলবারী ১০/৬))
৪র্থঃ
أن ابن جريج قال لعطاء: أواجبة الأضحية على الناس؟ قال: لا، وقد ذبح رسول الله صلى الله عليه و سلم
ইবনু জুরাইজ বলেন: আমি আত্বাকে প্রশ্ন করলাম, কুরবানী করা কি মানুষের উপর ওয়াজিব? তিনি বললেন: “না, ওয়াজিব নয়। তবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানী করেছেন।” (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক (৮১৩৪)সনদ ছহী দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়্যাহঃ ১৭)
কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার পক্ষে হানাফীগণ যে সব দলীল পেশ করেন তা হয় দুর্বল নতুবা দাবীর সাথে মিল নেই। (দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়া পৃঃ ১৯)
কুরবানীর পশুর বয়স:
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
لاتذبحوا إلا مسنة إلا أن يعسرعليكم فتذبحوا جذعة من الضأن (رواه مسلم والنسائي وغيرهم
 “তোমরা দুধের দাঁত ভেঙ্গে নতুন দাঁত উঠা (মুসিন্না) পশু ব্যতীত যবেহ কর না। তবে কষ্ট হলে ভেড়ার জাযআ তথা ছয়মাস বয়সের ভেড়া যবেহ করতে পার।” (ছহীহ মুসলিম, নাসায়ী প্রভৃতি) অত্র হাদীছ থেকে প্রমাণিত হল যে, মুসিন্না তথা উট, গরু, ছাগলের নতুন দাত উঠা পর্যন্ত কুরবানীর জন্য উপযুক্ত হবে না। তবে কষ্টকর  হলে ভেড়ার জাযআ বা ছয় মাস বয়সের বাচ্চা যবেহ করা যাবে।
নিম্নে বয়স ভেদে কুরবানীর জন্য উপযুক্ত পশুর তালিকা দেয়া হল:
উট: পাঁচ বছর বা তদূর্ধ্ব
গরু: দুই বছর বা তদূর্ধ্ব
ছাগল: এক বছর বা তদূর্ধ্ব
ভেড়া: ছয় মাস বা তদূর্ধ্ব
উপরোক্ত হাদীছের উপর ভিত্তি করে ইমাম নাওয়াভী (রহঃ) বলেন: “অত্র হাদীসে সুস্পষ্ট যে, ভেড়া ছাড়া অন্য কোন পশুর জাযআ তথা ছয়মাসের বাচ্চা কুরবানী করা কোন অবস্থাতেই জায়েজ হবে না। কাজী ইয়াজের ভাষ্যমতে এ বপারে সমস্ত উলামা একমত। তবে আমাদের সাথীদের মধ্য হতে আবদারী প্রমুখ আওযাঈ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি উট, গরু, বকরী, ভেড়া সব কিছুর জাযআহ্ দ্বারা কুরবানী হবে বলে মন্তব্য করেছেন। ইহা আত্বা হতেও বর্ণিত। তবে ভেড়ার জাযআ সম্পর্কে আমাদের ও সমস্ত উলামাদের অভিমত এই যে, ইহা কুরবানীতে চলবে- চাই অন্য পশু পাওয়া যাক বা না যাক। তাঁরা  ইবনে ওমার ও যুহরী প্রমুখ হতে বর্ণনা করেন যে, তারা বলেছেন: ভেড়ার জাযআও চলবে না। তাদের স্বপক্ষে হাদীছের বাহ্যিক অর্থ দলীল স্বরূপ নেয়া যেতে পারে।
তবে অধিকাংশ বিদ্বান বলেন: হাদীছটির নির্দেশ ভেড়ার জাযআর ক্ষেত্রে মোস্তাহাবের উপর প্রযোজ্য। অর্থাৎ উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা মূলক ভাষা এই হবে, তোমাদের জন্য মুস্তাহাব হল: তোমরা মুসিন্না ব্যতীত অন্য পশু দ্বারা যবেহ করবে না। তবে যদি তা না পাও তবে ভেড়ার জাযআহ যবেহ করবে। এতে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়না যে,  ভেড়ার জাযআহ কুরবানী করা নিষিদ্ধ এবং কোন অবস্থায় তা জায়েজ হবেনা। তাছাড়া সমস্ত বিদ্বান এ বপারে একমত যে, উক্ত হাদীসটি ব্যহ্যিক অর্থে নয়। কেননা, অধিকাংশ বিদ্বানের মত হল, ভেড়ার জাযআহ কুরবানী করা জায়েজ চাই অন্য পশু পাক বা না পাক। আর ইবনে উমর ও যুহুরী বলেন, সর্বাবস্থায় তা না জায়েজ চাই অন্য পশু থাকুক আর না থাকুক। তাহলে নিশ্চিতভাবে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, হাদীসটিতে মুসিন্না না পাওয়া গেলে ভেড়ার জাযআ দ্বারা কুরবানী করা মুস্তাহাব অর্থে ধর্তব্য হবে যেমনটি আমরা আগেই উল্লেখ করেছি। আল্লাহই সবচেয়ে বেশী জানেন।” (শরহ মুসলিম ১৩/ ১১৭)
মুসিন্না পশু থাকতেও ভেড়ার জাযআহ্ দ্বারা কুরবানী করা বৈধ হওয়ার কতিপয় দলীল:
১নং হাদীছঃ
عن عقبة بن عامر الجهني ،قال: قسم رسول الله فينا الضحايا فأصابني جذع فقال: ضح به (رواه مسلم في صحيحه :انظرمختصر صحيح مسلم للمنذري بتحقيق الألباني برقم: ১২৫৫
“উকবা বিন আমের জুহানী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  আমাদের মাঝে কুরবানীর পশু বণ্টন করলেন। আমার ভাগে জাযআ পড়লে তিনি বললেন: “ওটা দিয়েই তুমি কুরবানী কর”। (ছহীহ মুসলিম, মুখতাছার ছহীহ মুসলিম (আলবানীর তাহকীক কৃত) হা/১২৫৫)
অন্য বর্ণনায় উকবা বিন আমের বলেন:
ضحينا مع رسول الله بجذع من الضأن (أخرجه النسائي بسند جيد كما قاله الألباني )
 “আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ভেড়ার জাযআ দ্বারা কুরবানী করেছি”। (নাসাঈ, সনদ ভাল)
عن عاصم بن كليب عن أبيه قال: كنا مع رجل من أصحاب النبي يقال له مجاشع من بني سليم ،فعزت الغنم فأمر مناديا فنادى أن رسول الله كان يقول: إن الجذع يوفي مما يوفي منه الثني (أخرجه أبوداود برقم ২৭৯৯، كتاب الضحايا، باب مايستحب من الضحايا
আছিম বিন কুলাইব হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমরা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এক ছাহাবীর সাথে ছিলাম, তাঁর নাম হল মুজাশি’। তিনি সুলাইম ছিলেন গোত্রের । ছাগল সংকট দেখা দিল। তখন তিনি এক ব্যক্তিকে ঘোষণা করার জন্য নির্দেশ দিলে। সে এ মর্মে ঘোষণা দিল যে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন: “নিশ্চয় ভেড়ার জাযআহ সে ক্ষেত্রে যথেষ্ট যে ক্ষেত্রে দাঁত ওয়ালা পশু যথেষ্ট।” (আবু দাউদ,হা/২৭৯৯, কুরবানীর অধ্যায়। অনুচ্ছেদ: যে পশু দ্বারা কুরবানী করা মুস্তাহাব)
ভেড়ার জাযআহ (ছয় মাসের বাচ্চা) দ্বারা কুরবানী করা বৈধ হওয়ার স্বপক্ষে ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনগণের বানী ও আমল:
-عن أم سلمة زوج النبي قالت: لأن أضحى بجذع من الضأن أحب إلى من أن أضحى بمسنة من المعز
উম্মে সালামা হতে বর্ণিত তিনি বলেন, “আমার নিকট ছাগলের মুসিন্না দ্বারা  কুরবানী করার চেয়ে ভেড়ার জাযআহ্ দ্বারা কুরবানী করাই বেশি প্রিয়।” (বায়হাকী, সনদ হাসান। দ্রঃ ফিকহুল উহিয়্যাহঃ ৩৩)
 عن هشيم قال: أخبرنا حصين هو ابن عبد الرحمن- قال رأيت هلال ابن يساف يضح بجذع من الضأن فقلتُ: أتفعل هذا؟ فقال: رأيت أباهريرة يضح بجذع من الضأن  ( رواه سعيد بن منصور في سننه وإسناده صحيح : انظر فقه الأضحية :৩৩ )
হুশাইম বলেন, আমাকে হুসাইন বিন আব্দুর রহমান সংবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেন: আমি হেলাল বিন ইয়াসাফাকে ভেড়ার জাযআহ দ্বারা  কুরবানী করতে দেখে বললাম, আপনি এটা করছেন? তদুত্তরে তিনি বললেন: “আমি আবু হুরায়রাকে ভেড়ার জাযআহ দ্বারা কুরবানী করতে দেখেছি।” (সুনান সাঈদ বিন মানসূর, সনদ ছহীহ। দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়্যাহঃ ৩৩)
তবে ছাগল প্রভৃতির জাযআ (ছয় মাসের বাচ্চা) দ্বারা কুরবানী দেয়া যাবে না বা বৈধ হবে না। দলীল: পূর্বে বর্ণিত এ হাদীছটিঃ
لاتذبحوا إلا مسنة إلا أن يعسر  عليكم فتذبحوا جذعة من الضأن (رواه مسلم والنسائي وغيرهما )
 “তোমরা মুসিন্না অর্থাৎ যে পশুর নতুন দাঁত গজিয়েছে এ রকম পশু  ছাড়া অন্য কেন কোন পশু কুরবানীতে যবেহ কর না । তবে এ রোকম পশু সংগ্রহ করা কষ্টকর হলে ভেড়ার জাযআ তথা ভেড়ার এমন বাচ্চা যবেহ করতে পার যার বয়স ছয়মাস পূর্ণ হয়েছে।” (মুসলিম, নাসাঈ প্রমুখ)
দ্বিতীয় হাদীছঃ বারা বিন আযিবের হাদীছ, তিনি বলেন: আমার মামা আবু বুরদা ঈদের ছালাতের পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেন। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ খবর শুনে বললেন, “এটাতো গোস্তের ছাগল।” (অর্থাৎ নিছক গোস্ত খাওয়ার ছাগল, কুরবানী নয়)। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার নিকট ছাগলের জাযআহ রয়েছে।  তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বললেন:
: ضح بها أنت ولاتصلح لغير
“ওটাই কুরবানী কর। তবে তুমি ব্যতীত আর কারো জন্য তা চলবে না।” অপর বর্ণনায়:
 اذبحها ولن يجزئ عن أحد بعدك
“ওটাকেই তুমি কুরবানী করে দাও তবে তোমার পর আর কারো পক্ষ থেকে ঐ রকম পশু কুরবানী জায়েজ হবে না বা চলবে না । (মুসলিম) ইমাম বুখারীও প্রায় অনুরূপ হাদীস উল্লেখ করেছেন।
لاتصحالأضحيةإلابالأزواجالثمانية
শুধু আট প্রকার পশু দ্বারা কুরবানী দেয়া বৈধ:
আট প্রকার পশু দ্বারা কুরবানী সর্বসম্মতি ক্রমে জায়েজ।  তা হল:   (১) ভেড়া বা দুম্বা (২) ছাগল (৩) গরু (৪) উট। এগুলোর প্রত্যেকটির নর ও মাদি। (আল আনআমঃ ১৪৪ ও ১৪)
ইবনু  আব্দুল বার (রহঃ) বলেন:
والذي يضحى به بإجماع المسلمين، الأزواج الثمانية، وهى: الضأن والمعزوالإبل والبقر…. (انظر تفسير القرطبي عند تقسيره للآية: وفديناه بذبح عظيم )
 মুসলিমদের ঐকমত্যে আট প্রকার পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে। তা হল: ভেড়া বা দুম্বা, ছাগল, উট,এবং গরু (এ গুলো নর ও মাদি)। তবে ইবনুল মুনযির বলেন, হাসান বিন ছালেহ হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: “নীল গাভী দ্বারা সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানী করা যাবে।” ( তাফসীর কুরতুবী, সূরা সাফ্ফাতের ১০৭ নং আয়াতের তাফসীর)
ইমাম শীরাযী বলেন: চতুষ্পদ জন্তু ছাড়া কুরবানী আদায় হবে না। আর চতুষ্পদ জন্তু হল: উট, গরু, ছাগল ও ভেড়া। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেন:
﴿لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ﴾
 “তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে ঐ সমস্ত চতুষ্পদ জন্তুর উপর (যবেহ করার সময়) যা আল্লাহ তাদের কে রিজিক হিসাবে প্রদান করেছেন।” (আল আনআমঃ ১৪৪) {দ্রঃ আল মুহাযযা (৮/৩৯২)
গরুর ন্যায় মহিষের যাকাতের উপর কিয়াস করে অনেকে মহিষ দ্বারা কুরবানী জায়েজ বলেছেন। (মিরআত (২/৩৫৩-৫৪) এছাড়া হযরত আসমা (রা:) থেকে ঘোড়া কুরবানী, আবু হোরায়রা (রা:) থেকে মোরগ কুরবানী, হাসান বিন ছালেহ থেকে জংলি গাভী ও হরিণ কুরবানী ইত্যাদি কথাও বর্ণিত হয়েছে। সুবুলুস সালাম (কায়রো থেকে প্রকাশিত) ১৯৮৭, ৪/১৮৫) (যদিও বুখারী -মীরাটঃ ১৩২৮ হি: ) ৮২৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আসমা (রা:) এর রেওয়ায়াত ব্যতীত অন্য গুলির বর্ণনা সন্দেহ মুক্ত নয় ) কিন্তু এসবের কোনটি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত হিসাবে প্রমাণিত নয়। (দ্রঃ মসায়েলে কুরবানীঃ ৫)
বুখারীর আসমা বর্ণিত হাদীছে ঘোড়া দ্বারা কুরবানী কথা আসেনি বরং সাধারণ যবেহ করার কথা এসেছে। যেমনঃ
عن أسماء قالت: نحرنا فرسا على عهد رسول الله  فأكلناه  (رواه البخاري برقم ৫৫১০، ومسلم برقم ১৯৪২ والنسائي ৭/২২৭)
 আসমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামানায় একটি ঘোড়া জবহ করে খেয়েছিলাম।” (বুখারী হা/ ৫৫১০, মুসলিম হা/ ১৯৪২, নাসায়ী (৭/২২৭), প্রভৃতি)
মোট কথা: আট প্রকার পশু দ্বারা কুরবানী করা বৈধ। এতে কোন মতবিরোধ নেই  এবং এগুলো  দ্বারা কুরবানী করা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং ছাহাবাদের থেকেও প্রমাণিত। ঐ আট প্রকার পশু হল: (১) ভেড়া বা দুম্বা (২) ছাগল (৩) গরু (৪) উট। এগুলো নর ও মাদি।  অতএব কুরবানী দিতে হলে এগুলো দ্বারাই কুরবানী দেয়া উচিত।




লেখক: শাইখ আখতারুল আমান বিন আব্দুস সালাম

সম্পাদক: শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল




সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১২

কবীরা গুনাহ কাকে বলে?


কবীরা গুনাহ বলা হয় ঐ সকল বড় বড় পাপকর্ম সমূহকে যেগুলোতে নিন্মোক্ত কোন একটি বিষয় পাওয়া যাবে:
যে সকল গুনাহের ব্যাপারে ইসলামে শরীয়তে জাহান্নামের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
যে সকল গুনাহের ব্যাপারে দুনিয়াতে নির্ধারিত দণ্ড প্রয়োগের কথা রয়েছে।
যে সকল কাজে আল্লাহ তায়ালা রাগ করেন।
যে সকল কাজে আল্লাহ তায়ালা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ফেরেশতা মণ্ডলী লানত দেন।
যে কাজের ব্যাপারে বলা হয়েছে, যে এমনটি করবে সে মুসলমানদের দলভুক্ত নয়।
কিংবা যে কাজের ব্যাপারে আল্লাহ ও রাসূলের সাথে সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
যে কাজে দ্বীন নাই, ঈমান নাই ইত্যাদি বলা হয়েছে।
যে ব্যাপারে বলা হয়েছে ্‌এটি মুনাফিকের আলামত বা মুনাফিকের কাজ।
অথবা যে কাজকে আল্লাহ তায়ালা সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয় করা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকার মর্যাদাঃ
১. মহান আল্লাহ বলেন:
إِن تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُم مُّدْخَلًا كَرِيمًا
“যেগুলো স¤পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গোনাহ গুলো থেকে বেঁচে থাকতে পার। তবে আমি তোমাদের (ছাট) গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেব এবং সম্মান জনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব।” (সূরা নিসা: ৩১)

২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
الصلوات الخمس . والجمعة إلى الجمعة . ورمضان إلى رمضان . مكفرات ما بينهن إذا اجتنب الكبائر
“পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমআ থেকে আরেক জুমআ এবং এক রামাযান থেকে আরেক রামাযান এতদুভয়ের মাঝে সংঘটিত সমস্ত পাপরাশীর জন্য কাফফারা স্বরূপ যায় যদি কবীরা গুনাহ সমূহ থেকে বেঁচে থাকা যায়।” (মুসলিম)

১০০টি কবীরা গুনাহ:
আল্লাহর সাথে শিরক করা
নামায পরিত্যাগ কর
পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া
অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা
পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করা
যাদু-টোনা করা
এতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা
জিহাদের ময়দান থেকে থেকে পলায়ন করা
সতী-সাধ্বী মু‘মিন নারীর প্রতি অপবাদ দেয়া
রোযা না রাখা
যাকাত আদায় না করা
ক্ষমতা থাকা সত্যেও হজ্জ আদায় না করা
যাদুর বৈধতায় বিশ্বাস করা
প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া
অহংকার করা
চুগলখোরি করা (ঝগড়া লাগানোর উদ্দেশ্যে একজনের কথা আরেকজনের নিকট লাগোনো)
আত্মহত্যা করা
আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা
অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ ভক্ষণ করা
উপকার করে খোটা দান করা
মদ বা নেশা দ্রব্য গ্রহণ করা
মদ প্রস্তুত ও প্রচারে অংশ গ্রহণ করা
জুয়া খেলা
তকদীর অস্বীকার করা
অদৃশ্যের খবর জানার দাবী করা
গণকের কাছে ধর্না দেয়া বা গণকের কাছে অদৃশ্যের খবর জানতে চাওয়া
পেশাব থেকে পবিত্র না থাকা
রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নামে মিথ্যা হাদীস বর্ণনা করা
মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করা
মিথ্যা কথা বলা
মিথ্যা কসম খাওয়া
মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করা
জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া
সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া
মানুষের গোপন কথা চুপিসারে শোনার চেষ্টা করা
হিল্লা তথা চুক্তি ভিত্তিক বিয়ে করা।
যার জন্যে হিলা করা হয়
মানুষের বংশ মর্যাদায় আঘাত হানা
মৃতের উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে ক্রন্দন করা
মুসলিম সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা
মুসলিমকে গালি দেয়া অথবা তার সাথে লড়ায়ে লিপ্ত হওয়া
খেলার ছলে কোন প্রাণীকে নিক্ষেপ যোগ্য অস্ত্রের লক্ষ্য বস্তু বানানো
কোন অপরাধীকে আশ্রয় দান করা
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবেহ করা
ওজনে কম দেয়া
ঝগড়া-বিবাদে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা
ইসলামী আইনানুসারে বিচার বা শাসনকার্য পরিচালনা না করা
জমিনের সীমানা পরিবর্তন করা বা পরের জমি জবর দখল করা
গীবত তথা অসাক্ষাতে কারো দোষ চর্চা করা
দাঁত চিকন করা
সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে মুখ মণ্ডলের চুল তুলে ফেলা বা চুল উঠিয়ে ভ্রু চিকন করা
অতিরিক্ত চুল সংযোগ করা
পুরুষের নারী বেশ ধারণ করা
নারীর পুরুষ বেশ ধারণ করা
বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কামনার দৃষ্টিতে তাকানো
কবরকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করা
পথিককে নিজের কাছে অতিরিক্ত পানি থাকার পরেও না দেয়া
পুরুষের টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পোশাক পরিধান করা
মুসলিম শাসকের সাথে কৃত বাইআত বা আনুগত্যের শপথ ভঙ্গ করা
ডাকাতি করা
চুরি করা
সুদ লেন-দেন করা, সুদ লেখা বা তাতে সাক্ষী থাকা
ঘুষ লেন-দেন করা
গনিমত তথা জিহাদের মাধ্যমে কাফেরদের নিকট থেকে প্রাপ্ত সম্পদ বণ্টনের পূর্বে আত্মসাৎ করা
স্ত্রীর পায়ু পথে যৌন ক্রিয়া করা
জুলুম-অত্যাচার করা
অস্ত্র দ্বারা ভয় দেখানো বা তা দ্বারা কাউকে ইঙ্গিত করা
প্রতারণা বা ঠগ বাজী করা
রিয়া বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সৎ আমল করা
স্বর্ণ বা রৌপ্যের তৈরি পাত্র ব্যবহার করা
পুরুষের রেশমি পোশাক এবং স্বর্ণ ও রৌপ্য পরিধান করা
সাহাবীদের গালি দেয়া
নামাযরত অবস্থায় মুসল্লির সামনে দিয়ে গমন করা
মনিবের নিকট থেকে কৃতদাসের পলায়ন
ভ্রান্ত মতবাদ জাহেলী রীতিনীতি অথবা বিদআতের প্রতি আহবান করা
পবিত্র মক্কা ও মদীনায় কোন অপকর্ম বা দুষ্কৃতি করা
কোন দুষ্কৃতিকারীকে প্রশ্রয় দেয়া
আল্লাহর ব্যাপারে অনধিকার চর্চা করা
বিনা প্রয়োজনে তালাক চাওয়া
যে নারীর প্রতি তার স্বামী অসন্তুষ্ট
স্বামীর অবাধ্য হওয়া
স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর অবদান অস্বীকার করা
স্বামী-স্ত্রীর মিলনের কথা জনসম্মুখে প্রকাশ করা
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাদ সৃষ্টি করা
বেশী বেশী অভিশাপ দেয়া
বিশ্বাস ঘাতকতা করা
অঙ্গীকার পূরণ না করা
আমানতের খিয়ানত করা
প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া
ঋণ পরিশোধ না করা
বদ মেজাজি ও এমন অহংকারী যে উপদেশ গ্রহণ করে না
তাবিজ-কবজ, রিং, সুতা ইত্যাদি ঝুলানো
পরীক্ষায় নকল করা
ভেজাল পণ্য বিক্রয় করা
ইচ্ছাকৃত ভাবে জেনে শুনে অন্যায় বিচার করা
আল্লাহ বিধান ব্যতিরেকে বিচার-ফয়সালা করা
দুনিয়া কামানোর উদ্দেশ্যে দীনী ইলম অর্জন করা
কোন ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জানা সত্যেও তা গোপন করা
নিজের পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে দাবী করা
আল্লাহর রাস্তায় বাধা দেয়া
(সমাপ্ত)

সংকলনে: আব্দুল্লাহিল হাদী

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার/ট্যাগ করতে ভুলবেন না কিন্তু।

শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১২

ফরয গোসল

প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নর ও নারীর যা জানা অপরিহার্য...

ফরয গোসল : ঐ গোসলকে বলা হয়, যা করা অপরিহার্য। বালেগ বয়সে নাপাক হ’লে গোসল ফরয হয়। যেমন- আল্লাহ বলেন, وَ إِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا ‘যদি তোমরা নাপাক হয়ে থাক, তবে গোসল কর’ (মায়েদাহ ৬)।

গোসলের পদ্ধতি : ফরয গোসলের জন্য প্রথমে দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুবে ও পরে নাপাকী ছাফ করবে। অতঃপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ছালাতের ওযূর ন্যায় ওযূ করবে। অতঃপর প্রথমে মাথায় তিনবার (৩ অঞ্জলি) পানি ঢেলে চুলের গোড়ায় খিলাল করে ভালভাবে পানি পৌঁছাবে। তারপর সারা দেহে পানি ঢালবে ও গোসল সম্পন্ন করবে। [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৩৫]

জ্ঞাতব্য : (১) গোসলের সময় মেয়েদের মাথার খোপা খোলার দরকার নেই। কেবল চুলের গোড়ায় তিনবার তিন চুল্লু পানি পৌঁছাতে হবে। অতঃপর সারা দেহে পানি ঢালবে। [64]

(২) রাসূল (ছাঃ) এক মুদ্দ (৬২৫ গ্রাম) পানি দিয়ে ওযূ এবং অনধিক পাঁচ মুদ্দ (৩১২৫ গ্রাম) বা প্রায় সোয়া তিন কেজি পানি দিয়ে গোসল করতেন। [65] প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি অপচয় করা ঠিক নয়।

(৩) নারী হৌক পুরুষ হৌক সকলকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পর্দার মধ্যে গোসল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।[66]

(৪) বাথরুমে বা পর্দার মধ্যে বা দূরে লোকচক্ষুর অন্তরালে নগ্নাবস্থায় গোসল করায় কোন দোষ নেই।[67]

(৫) ওযূ সহ গোসল করার পর ওযূ ভঙ্গ না হ’লে পুনরায় ওযূর প্রয়োজন নেই।[68]
(সূত্রঃ ছালাতুর রাসূল ছাঃ বই)

বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১২

প্রশ্নঃ জুম’আর ফরজের আগে ও পরে কত রাকআত সালাত আদায় করব?


উত্তর- আমরা সকলেই জানি যে, জুম’আর ফরজ হল ২ রাকআত। আর সুন্নাত হল- ফরজের আগে দুই রাকআত (তাহিয়্যাতুল মাসজিদ) এবং পরে চার রাকআত বা দুই রাকআত। আর বাইরে ফরজের আগে অতিরিক্ত নির্দিষ্ট সংখ্যক কোন সালাত নেই। তএ দুই দুই রাকআত করে যে যত রাকআত ইচ্ছা নফল হিসেবে আদায় করতে পারে। উল্লেখ্য যে, প্রচলিত কাবলাল জুম’আ শিরোনামে চার রাকআত বিশিষ্ট কোন সালাত সহীহ হাদিসে পাওয়া যায় না। খুৎবার আগে এক সালামে চার রাকআত আদায়ের পক্ষে দলীল হিসাবে আনীত হাদিসটির সনদ খুবই দুর্বল যা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে কমপক্ষে দুই রাকআত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত পড়তেই হবে। এমনকি ইমাম সাহেবের খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলেও। তবে যারা আগে থেকেই দুই রাকআত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সালাত আদায় করে বসে আছেন, তারা খুৎবার সময় কোন নামাজ পড়বে না।

অতঃপর জুম’আর ফরজের পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) চার রাকআত সালাত আদায় করতে বলেছেন (মুসলিমঃ ১৯১৩ ইফা)।

তবে আব্দুল্লাহ(রাঃ) বর্ণিত এক হাদিসে পাওয়া যায় যে, নবী (সাঃ) জুম’আর নামাজ পড়ে ফিরে এসে নিজ বাড়িতে দুই রাকআত নামাজ পড়তেন (মুসলিমঃ ১৯১৬ ইফা)।

আরেকটি হাদীসে সুহাইল (রাঃ) বলেন, তোমরা তাড়াহুড়া থাকলে মসজিদে দুই রাকআত এবং (বাড়িতে) ফিরে গিয়ে দুই রাকআত পড়ো (মুসলিমঃ ১৯১৪ ইফা)।

এ থেকে ইজতিহাদ করে ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রাঃ) বলেছেন যে, ফরজের পর মসজিদে হলে চার রাকআত আর বাড়িতে হলে দুই রাকআত সুন্নাত নামাজ পড়বে।